এমরান মাহমুদ প্রত্যয়,আত্রাই(নওগাঁ)প্রতিনিধি : ইসরাফিল আলম পিতা মরহুম আজিজুর রহমান,মাতা মরহুমা এসেদা রহমান নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৬৬ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। দশ ভাই বোনের মধ্যে ইসরাফিল আলম ছিলেন চতুর্থ। তাঁর শৈশব ও কৈশোর জীবন কাটেছে নিজ গ্রাম ঝিনায়,সবুজ শ্যামলে ঘেরা সবুজ প্রকৃতির মাঝে।কিশোর বেলায় তিনি ছিলেন দুরন্ত।ইসরাফিল আলম নওগাঁ সরকারি কলেজে পড়ার সময় পরিবারের উপর অভিমান করে রাজধানী ঢাকায় পারিজমায়। এই অল্প সময়ে জীবনে রাজনীতির পরে ও আরেকটি সুন্দর সুশীল সাবলীল জীবন ছিল তাঁর।একটু অবসর পেলেই মেতে উঠতেন শিক্ষা সংস্কৃতি ও গান বাজনা নিয়ে।এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন তারকা কণ্ঠশিল্পী,সাহিত্যিক,লেখক,সম্পাদক ও গবেষক। দূরদর্শী ও চিন্তাশীল ব্যক্তি ছিলেন ইসরাফিল আলম।মানুষের জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ, তিনি স্বপ্ন দেখতেন ও মানুষকে স্বপ্ন দেখাতেন।তিনি ছিলেন উন্নয়নের রুপকার। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল কলেজ সহ বিভিন্ন প্রজেক্ট।তিনি শিক্ষার মানকে করেছেন প্রসারিত। নির্বাচনী দুই উপজেলার অনেক ব্যক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন । অল্প সময়ে এলাকার মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন। কিন্তু অকালেই তাকে বিদায় নিতে হলো। জানা গেছে, এলাকার শিক্ষিত ও বেকারদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে রানীনগর উপজেলায় ‘পল্লী শ্রী নিকেতন খামার, মাদার কেয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ইসরাফিল আলম ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন’ এবং আত্রাই উপজেলায় ‘রবীন্দ্র জার্নাল সাহিত্য এবং রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য পতিসরে কৃষি ডিপ্লোমা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। যেখানে অনেক বেকার ও শিক্ষিত যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৫ সালের রানীনগর উপজেলার কাশিমপুরে প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর ‘পল্লী শ্রী নিকেতন খামার’ গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশি, ব্রাহমা, ফ্রিজিয়ান, অস্ট্রেলিয়া ও সিন্ধু গরু, মেষ, ভেড়া, টার্কি, পাখি,হাঁস ও মুরগি। এছাড়া রয়েছে মাছের খামার, কেঁচো কম্পোস্ট সার ও মাশরুম এবং বিভিন্ন ফলের গাছ। প্রদর্শনী খামার দেখাশোনার জন্য প্রায় ৪০ জন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। পল্লী শ্রী নিকেতন খামার দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন শাহিন সরদার। তিনি বলেন, গত তিন বছর ধরে এই খামার তদারকির দায়িত্বে রয়েছি। যেখানে উন্নত জাতের গরু ও ছাগল পালন করা হয়। মাশরুম ও কেঁচো কম্পোস্ট সারের হাউস ৩২টি ও ১৪টি পুকুরসহ বিভিন্ন ফলের বাগান রয়েছে। যেখান থেকে এলাকাসহ অন্য জেলার মানুষ উপকৃত হন। আত্রাই উপজেলায় রবীন্দ্র জার্নাল সাহিত্য এবং রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য পতিসরে কৃষি ডিপ্লোমা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন,তিনি ছিলেন সমাজের একজন আলোকবর্তিকা স্বরুপ।তিনি ছিলেন রবীন্দ্র জার্নাল’র সম্পাদক। তাঁর রচিত গান কবিতা গল্প প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। তাঁর সম্পাদিত কাব্য গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চেতনার জয় বাংলা। তিনি ছিলেন দাগ সাহিত্য সংগঠনের উপদেষ্টা। বাংলা একাডেমির সভাপতি ড.শামসুজ্জামান খাঁন ইসরাফিল আলম এর স্মৃতিচারণ করে বলেন ,সংস্কৃতির সেবক ও রবীন্দ্র জার্নাল সম্পাদক,রবীন্দ্রনাথের কেন্দ্র আত্রাই পতিসরকে তিনি প্রাণবন্ত করে রেখেছিলেন।পতিসরে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষণা ইনিস্টিউট চালু করেন যা চলমান আছে। ইসরাফিল আলম একটি আত্রাইয়ে ‘রবীন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের’ স্বপ্ন দেখতেন। আত্রাই ও রাণীনগরের মাটি ও মানুষের কথা ভেবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন তার পতিসরে কৃষিনির্ভর এলাকার কৃষকদের উন্নয়ন, শিক্ষা ও চিকিৎসার বিষয় নিয়ে ভাবতেন। রবীন্দ্রনাথের ভাবনার সঙ্গে ইসরাফিল আলমের ভাবনার অনেক মিল ছিল। সেই বিষয়গুলো নিয়ে তিনি এলাকার উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন।স্বপ্ন দেখতেন শিক্ষা ও সাহিত্যের। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তৎকালীন ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম। সেই সংসদে তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন। বর্তমান সংসদে ওই কমিটির পাশাপাশি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। গত সোমবার (২৭ জুলাই) সকাল সোয়া ৬টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ইসরাফিল আলমের এই অকাল মৃত্যুতে এলাকাবাসীর যে অপূরণীয় ক্ষতি এ ক্ষতি পুরণ হবার নয়। শুধু নওগাঁ আত্রাই রাণীনগর এলাকা নয় পুরো দেশ হারিয়েছে একজন কবি,সাহিত্যিক,গবেষক, শিল্পী, ও সম্পাদক কে।
Discussion about this post