মো: আক্তার হেসেন : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মীরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক শেরীন অবৈধভাবে সরকারী রাস্তার গাছ কর্তন করা অভিযোগ উঠেছে। গত ৯জুলাই ২০২০ইং জগন্নাথপুর উপজেলাধীন ১০১ নং জেএলস্থিত শ্রীরামসী মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের ৪০৭২ নং দাগের শ্রীরামসী বাজার সড়কের পশ্চিম পার্শ্বের সড়ক সংলগ্ন ভূমি হতে কর্তৃপক্ষের বিনানুমতিতে ২টি শীল কড়ই গাছ কর্তন করেন। এদিকে জগন্নাথপুর উপজেলার ভুমি কর্মকর্তা ইয়াসির আরাফাত চেয়ারম্যান কর্তৃক অবৈধভাবে সরকারি গাছ কর্তনের খবরটি সরজমিন তদন্ত করে এর সত্যতা পান। এবং তার বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কর্তনের প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরন করেন। মাহবুবুল হক শেরীনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি মূলত জামায়াত- শিবির ঘরানার ব্যবসায়ী। ২০০২ সাল থেকে তিনি সিলেট অবস্থান নিয়ে ব্যবসায় জরিয়ে পড়েন জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে। যে ব্যবসার চেয়ারম্যান ছিলেন শেরীন, সেই ব্যবসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন জামায়াতের নেতা। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যবহার হয়েছে আওয়ামী লীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায় হওয়ার পর শেরীন খোলস পাল্টে ফেলেন। শ্রীরামশির সন্তান শেরীন জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন কয়েকজন নেতাকে অনৈতিক ফায়দা দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে শেরীন জামায়াত-বিএনপির ঢাল হয়ে হয়ে কাজ করছেন এখন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, শেরীন নিজেকে একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি পরিচয় দিয়ে আসছেন। তিনি চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জামায়া-বিএনপির সাথে ব্যবসা শুরু করেন। এখন তাদের সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকটা গোপনে। স্বার্থান্বেষী কতিপয় নেতার কারনে সে আশ্রয় পেয়েছে আওয়ামীলীগে। কর্মীদের অভিযোগে শেরীন মূলত নানা ধরনের প্রতারনা করেন। এই প্রতারনার দায় এসে পড়ে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের উপর। কারন তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছেন অনেক জনের সাথে প্রতারনা করে আসছিলেন । ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী তার আসল ঠিকানা সে গোপন রাখেন। এদিকে চেয়ারম্যান হওয়ার আগে বিভিন্ন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের সাথে প্রতারনা চালিয়ে যান। এবং ভুয়া ঠিকানাই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রতারনা মামলা হয় এবং সাজা প্রাপ্ত হন। অনুসন্ধানে জানাযায়, দুর্নীতি দমন কমিশন ২০১২ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করে শেরীনের বিরুদ্ধে। মামলা নং৭০। ওই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে পুলিশ অভিযান চালায় পল্টনের ঠিকানায়। কিন্তু সেখানে শেরীনের কোনো অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি। ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৩ সালে মোহাম্মদপুর থানায় আরেকটি মামলা হয়। মামলা নং: ২০। মামলাটি করেন এডভোকেট শওকত আলম। পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিআর-৪৩৯/১৬ নং মামলা হয়। এক কোটি পঁচিশ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে শেরীনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলা নং সিআর ১৩৯৪/১৫। ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জনৈক নুরুজ্জামান সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা করেন শেরীনের বিরুদ্ধে। মামলা নং সিআর ৫১৮/১১। এই মামলায় শেরীনের ২ বছরের সাজা এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে। ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১১ সালে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা হয়। মামলা নং ৪২০/১১। ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২৮১৮/২০১৩ নং মামলায় শেরীনের ১ বছরের সাজা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে মাহবুবুল হক শেরীন তার অপকর্ম ঢাকতে একটি প্রতারক চক্র গড়ে তুলেছেন। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে ওই চক্রটি নানাভাবে হুমকি দেয়। সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে শেরীনের বিরুদ্ধে। সেই বহু রূপী শেরীন এখন মীরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
Discussion about this post