আসন্ন ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী মোবাইল, ব্যাংক ও তামাকসহ বেশকিছু খাত থেকে ভ্যাট ও শুল্ক হিসেবে অতিরিক্ত প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা পাওয়ার প্রত্যাশা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- তামাক পণ্য, মোবাইল কলরেট, ইন্টারনেট সার্ভিস, ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব, মোটরসাইকেল খাত ও প্রসাধনী ইত্যাদি। যেখান থেকে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক হিসেবে ওই অর্থ পাচ্ছে এনবিআর।
এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, যতগুলো খাতের কথা উল্লেখ করলেন (উপরে উল্লেখিত) এগুলো সবই সম্ভাবনা, তবে আমরা আশাবাদী। শেষ পর্যন্ত যদি বাজেটে এগুলো অন্তর্ভুক্ত রেখে চূড়ান্ত হয় আমাদের প্রত্যাশার অনেক অংশ পূরণ হবে। তবে মনে রাখবেন লক্ষ্যমাত্রা কিন্তু অনেক। তাই মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি।
এনবিআরের অস্থায়ী হিসাব মতে, মোবাইল ব্যবহারকারীদের সম্পূরক শুল্ক দশ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর কারণে এখাত থেকে অতিরিক্ত প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আসতে পারে। যেখানে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এনবিআর মোবাইল ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ভ্যাট ও শুল্ক বাবদ ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা পেয়েছিল।
অন্যদিকে সিগারেট, বিড়ি ও জর্দাসহ তামাকজাতের সম্পূরক শুল্ক ও স্ল্যাব প্রতি দাম বৃদ্ধির কারণে ৮ হাজার টাকার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব পাওয়ার প্রত্যাশা করছে এনবিআর। যেখানে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এনবিআর এ খাত থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা পেয়েছিল।
বাজেটে মোটরসাইকেলের উৎপাদন ও অ্যাসেম্বলিং সেক্টরে ভ্যাট ছাড়ের সুবিধা প্রত্যাহারের কারণে রাজস্ব বোর্ড এখাত থেকে পাবে অতিরিক্ত ৯০০ কোটি টাকা। ২০১০ সালে দেওয়া মোটরসাইকেলের শিল্পের ভ্যাট সুবিধাটি ৩০ জুন, ২০২০ এ শেষ হবে। অর্থমন্ত্রী আ ফ ম মোস্তফা কামাল ২০২০ সালের ফিন্যান্স বিলে এ সুবিধা আর বাড়াবেন না বলে জানিয়েছে। কারণ খাতটি ইতোমধ্যে ছাড়টি ব্যবহার করে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
ডেবিট বা ক্রেডিট ব্যালেন্স নির্বিশেষে ১০ লাখ টাকার ওপরে ব্যাংক ব্যালেন্সে আবগারী শুল্ক বাড়ানোর ফলে অতিরিক্ত ৩০০ কোটি টাকা নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাজস্ব বোর্ড গত অর্থবছরে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা আবগারি শুল্কে পেয়েছিল।
প্রসাধনীগুলিতে সম্পূরক শুল্ক ৫ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করার ফলেও বড় ধরনের রাজস্ব আসার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিসেবার ওপর ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে এবং সিরামিক সিঙ্কে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলেও রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
অতিরিক্ত রাজস্ব আনতে পারে এমন আরও কিছু খাতের মধ্যে রয়েছে, আপিল করার জন্য প্রদেয় ফি ভ্যাট ১০ থেকে ২০ শতাংশে বৃদ্ধি করা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লঞ্চ সার্ভিসে ভ্যাট বৃদ্ধি, চার্টার্ড হেলিকপ্টার পরিষেবাগুলিতে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি এবং কিছু পণ্যের আমদানিতে ভ্যাট বসানো ইত্যাদি।
২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে সরকার এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এনবিআর ভ্যাট শাখার জন্য সর্বাধিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, আয়করের জন্য ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি এবং আমদানি-রপ্তানি শুল্কে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা।
Discussion about this post