মো. আবু রায়হান চৌধুরী : হোমনায় ১০বছর পর মায়ের অপমানের প্রতিশোধ নিতে প্রতিবেশি চাচাকে কুপিয়ে হত্যা
মাকে অপমান করা হয়েছে- এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না ছেলে বশির মিয়া। তাই প্রতিশোধ নিতে ফিল্মি কায়দায় ছুড়ি হাতে ছুটে গেলেন প্রতিবেশী চাচার বাড়িতে। দীর্ঘ্য ১০বছর এর তীব্র চাপা ক্ষোভ, মনের ভিতরে পতিশোধের আগুন এবং হিংস্রতা নিয়ে ছুটে গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় ডেকে বাড়ির বাহিরে এনে দারালো ছুড়ি দিয়ে কুপিয়ে প্রতিবেশি চাচা কে হত্যা করেন। একের পর এক আঘাতের ফলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন চাচা নুরুল ইসলাম (৫৫) মায়ের অপমানের প্রতিশোধ নেয়া সম্ভব হলেও। অধিকন্তু তার স্থান হয়েছে থানায়। শুধু তাই নয় হামলার এক পর্যায়ে নিহতের ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম (৪৫) পাশ্ববর্তী ঘর হতে দৌড়ে ছুটাতে আসলে তাকেও কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে আজ (১৮মে) ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার হোমনা উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের জয়নগর কালমিনা গ্রামে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জয়নগর কালমিনা গ্রামের ঘাতক বশির মিয়ার বাবা আব্দুল বারেক মিয়া ১২বছর আগে নিহত নজরুল ইসলামের কাছে আমড়া চেয়ে না পেয়ে কথা কাটাকাটি ও পরে ঝগড়া বেধে যায়। ওই ঘটনায় গ্রাম্য শালিস বৈঠকও হয়। শালিসে নজরুল ইসলামের স্ত্রী বশিরের মাকে অপমান ও মারধর করার কথা জানা যায়। তখন থেকেই প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে বশির। এরই জের ধরে সোমবার ফজর নামাজের পর মো. নজরুল ইসলাম (৫৫) কে বাড়িতে গিয়ে বাহিরে ডেকে এনে খুন করে প্রতিশোধ নেয় বশির (৩৮) নামের ওই যুবক। খুন হওয়া নজরুল ইসলাম ঐ গ্রামের মৃত আবদুল মজিদের ছেলে। এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘাতককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
স্থানীয় ও নিহতের স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, আজ সোমবার ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে নজরুল ইসলাম নিজ ঘরে শুয়ে ছিলেন। এসময় একই বাড়ির আব্দুল বারেকের ছেলে বশির তার বাড়িতে এসে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এতে নজরুল ইসলাম ঘরের দরজা খুলে দেন। দরজা খোলার সাথে সাথেই নজরুল কিছু বুঝে উঠার আগেই বশির তার কমর থেকে ছুরি বের করে তাকে এলোপাথারি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এসময় তার চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম এগিয়ে এলে বশির তাকেও ছুরিকাঘাত করে মারাত্মত আহত করে। পরে তাদের আর্ত চিৎকারে স্থানীরা এগিয়ে এসে বশিরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নজরুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। আর রফিকুল ইসলামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকায় রেফার করেন।
এ ব্যাপারে হোমনা-মেঘনা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ফজলুল করিম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে থানায় আটক বশির খুনের কথা স্বীকার করে জানান, দীর্ঘ ১০ বছর আগে নজরুল ইসলামের কাছে আমড়া চেয়েছিলো বশিরের বাবা আব্দুল বারেক। এ নিয়ে নজরুলের কথা কাটা কাটির এক পর্যায়ে ঝগড়া হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে গ্রামে শালিস বসে। ঐ শালিসে নজরুল ইসলামের স্ত্রী বশিরের মাকে অপমান করাসহ মারধর করেন। তখন থেকেই সে এর প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে হত্যার আসল রহস্য উদঘাটিত হবে।
Discussion about this post