ADVERTISEMENT
ভাইরাসে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্যে। দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা খুব দ্রুত বেড়ে চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৮৭ জনের। যা দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে করোনায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২২ জনে।
এছাড়া এই ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৪২৭ জনসহ আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ৭৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন মাত্র ১৩৫ জন।
যুক্তরাজ্যে বর্তমানে ৭ হাজার ৫২০ জন আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭ হাজার ৫০০ জনের অবস্থা সাধারণ। বাকি ২০ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকংশই আইসিউতে রয়েছেন।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আগামী তিন সপ্তাহের জন্য ব্রিটেন লকডাউন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে দেশবাসীকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সরকারের নিদের্শনা না মানলে জরিমানা করারও আদেশ দিয়েছেন। গত সোমবার রাত সাড়ে আটটায় তিনি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এই ঘোষণা দেন।
মি. জনসন বলেন, জরুরি পণ্যসামগ্রী ও ওষুধ ক্রয়, দিনে একবার ব্যায়াম এবং কাজের জন্য ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। একসঙ্গে দুইজনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ করে তিনি বলেন, আইন ভঙ্গকারীদের জরিমানা করা হবে। বিধি লঙ্ঘনে ৩০ পাউন্ড থেকে ১ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। জনগণ এসব নির্দেশ অমান্য করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দোকান ছাড়া অন্যান্য সবধরনের দোকান অনতিবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। লাইব্রেরি, খেলার স্থান, ব্যায়ামাগার এমনকি উপাসনালয়ও বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেন বরিস। পার্ক খোলা থাকলেও জনসমাগম থাকবে সীমিত।
বরিস জনসন বলেন, পারলৌকিক ক্রীয়া ব্যতীত সকল ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান, বিয়ে বন্ধ থাকবে। তিন সপ্তাহ পর পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
তিনি বলেন, শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঝুঁকি মোকাবিলা করছে যুক্তরাজ্য। সকলে মিলে এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে হবে। এমন একটি সময় আসবে যখন বিশ্বের কোনো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই ভাইরাসের মোকাবিলা করতে পারবে না। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে ভেনটিলেট, ইনটেনসিভ বেড, ডাক্তার এবং নার্স নেই।
উল্লেখ্য, চীন থেকে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। সেখানে ভাইরাসটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও অন্যান্য দেশে বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এতে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ২৯৬ জন। এর মধ্যে ইতালিতেই ৭৪৩ জন। এ নিয়ে করোনা ভাইরাসে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৮ হাজার ৯০৭ জনে। এর মধ্যে চীনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ২৮১। চীনের বাইরে মারা গেছে ১৫ হাজার ৬২৬ জন।
বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩ হাজার ৩৮৪ জনসহ আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ২২ হাজার ৬২৯ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৮ হাজার ৮৭৯ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ২১৮ জন। চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৪০ হাজার ২৪২ জন।
এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৫ জন আক্রান্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৬০ জনের অবস্থা সাধারণ। বাকি ১৩ হাজার ৯৫ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়েছে। প্রথম এক লাখ রোগী শনাক্ত হতে সময় লেগেছে ৬৭ দিন। পরবর্তী এক লাখ শনাক্ত হয় ১১ দিনে। চার দিনে তৃতীয় এক লাখ রোগী শনাক্ত হয়। আর ৪র্থ লাখ হতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ দিন।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রেইয়সুস অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারগুলো এই বৈশ্বিক মহামারি ঠেকাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি সরকারগুলোকে নিজ নিজ দেশের করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় এখন লকডাউন যথেষ্ট নয়।
করোনা ভাইরাস পৃথিবীজুড়ে অদ্ভুত এক আঁধারের ছায়া নিয়ে এসেছে। চারিদিক নিরব, নিস্তব্ধ। কেউ কারও সাথে মিশছে না বা চাইছে না। যেন সবাই সবাইকে এড়িয়ে যেতে পারলেই বাঁচে। ‘বিশ্ব গ্রাম’ ধারণায় মানুষ অনেক বছর ধরেই একাকি জীবনের অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল। কিন্তু এতটা একাকি হয়তো তারা কখনোই হয়নি। যে চাইলেও তারা একে অন্যের সাথে দেখা করতে পারবে না। সবাই যেন এক যুদ্ধ কেন্দ্রীক জরুরি অবস্থায় রয়েছে।
এক করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বকেই যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে। অধিকাংশ দেশেই রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, শপিংমল-মার্কেট, রেস্তোরাঁ-বার ফাঁকা। যেন সব ভূতুড়ে নগরী, যুদ্ধকালীন জরুরি অবস্থা চলছে। সবার মধ্যে ভয়, আতঙ্ক আর আশঙ্কা।
উহান, চীনের শিল্পোন্নত এই শহর থেকেই প্রথম করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ভাইরাসটি প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও চীনের বাইরে ব্যাপক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
চীনে উদ্ভূত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৯৭টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
Discussion about this post