নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফিরবে কবে? এ প্রশ্ন চড়া দামের কারণে হাপিয়ে ওঠা মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের ক্রেতাদের। পেঁয়াজ, চাল থেকে শুরু করে সবজির বাজারের অস্থিরতা কিছুতেই কমছে না। বাজারে শীতের সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ ও সরকারের নানা আশ্বাস সত্ত্বেও কিছুতেই নাগালে আসছে না জিনিসপত্রের দাম।
গত দুই মাস ধরেই পেঁয়াজের বাজার চড়া। এখনও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৯৫ থেকে ১০টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে। অথচ তিন মাস আগেও ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বেড়েছে চালের দামও। সম্প্রতি মিলারদের সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরও চালের দাম কমেনি। বরং সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বাড়তে শুরু করেছে।
ব্যবসায়ীরা এতদিন বলে আসছিলেন বাজারে শীতের সবজি উঠলেই কমে যাবে দাম। পর্যাপ্ত সরবরাহের পরও রাজধানীর খুচরা বাজারে একাধিক সবজি কেজিতে ১০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে।
ময়দার বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ময়দার দাম কেজিতে ৩ টাকা বেড়েছে। ভোজ্যতেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল দুই মাসের ব্যবধানে প্রতি লিটারে সর্বোচ্চ ১০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তাছাড়া ডাল, দারুচিনি, ধনে ও তেজপাতা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে এসব খাদ্যপণ্য কিনতে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তা।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। গাজর, টমেটো, শিম, উচ্ছে, বেগুন, বরবটির কেজি একশ টাকার ঘরে। বাকি সবজিগুলোর দামও ব্যাপক চড়া। বেশিরভাগের দাম একশ টাকার কাছাকাছি।
বাজার ও মানভেদে গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। গত কয়েক মাসের মতো পাকা টমেটোর কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। এছাড়া বরবটির ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১১০ টাকা, উস্তে ৯০ থেকে ১১০ টাকা কেজি।
এদিকে সরকার দুই দফা দাম বেঁধে দিলেও এখনও আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সরকার প্রথমে খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি সর্বোচ্চ ৩০ টাকা এবং পরবর্তীতে ৩৫ টাকা বেঁধে দেয়। বাজারে আসা নতুন আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।
শীতের অন্যতম প্রধান সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির দামেও স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না। ছোট একটি ফুলকপি কিনতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে। একই দাম দিতে হচ্ছে বাঁধাকপির জন্য।
ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। উস্তা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঝিঙা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এক হালি কাঁচা কলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
স্বস্তি মিলছে না কাঁচামরিচের দামেও। এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আহাদ মিয়া বলেন, সবজির দাম কমতে আরও সময় লাগবে। শীতের সবজি বাজারে ভরপুর আসার আগে দাম কমার সম্ভাবনা কম। এখন বাজারে যে হারে আগাম সবজি আসছে, চাহিদা তার চেয়ে বেশি। এ কারণেই দাম বেশি।
হাতিরপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা আক্কাস আলী বলেন, আমি প্রায় ৬ বছর ধরে সবজি বিক্রি করছি। আগে কখনো এত দীর্ঘ সময় ধরে সবজি এমন চড়া দামে বিক্রি করিনি। সবজির দাম বেশি হওয়ায় আমাদের বিক্রি কমে গেছে। ফলে লাভও হচ্ছে কম। যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছি।
সবজি বিক্রি কমার পরও দাম কেন কমছে না, জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, বিক্রি যে হারে কমেছে বাজারে সবজি আসা কমেছে তার চেয়ে বেশি হারে। আড়তে গিয়ে আমরাই অনেক সময় পছন্দের সবজি কিনতে পারি না। তবে শীতের সবজি ওঠা শুরু হয়ে গেছে। আমাদের ধারণা, সামনের মাস থেকে দাম কিছুটা কমতে পারে।
এদিকে সবজির চড়া দামের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম। ব্রয়লার মুরগি গত সপ্তাহের মতো ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা ডজন।
কারওয়ানবাজারে কথা হয় আসাদুল হক নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। এই পোশাক শ্রমিক বলেন, কোনোদিন ভাবিনি সবজিও এত দামি জিনিস হয়ে যাবে। তাহলে চারটা ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচবো কী করে? সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কি কিছুই করার নেই!
Discussion about this post