করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামনের সারির সৈনিকরা সম্মানতো পাচ্ছেনই না, উল্টো নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
একজন নারী স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘আমরা স্বামী সংসার সব ফেলে আসছি। আমরা শুধু এই মানুষের সেবা করার জন্য আসছি। মানুষকে সুস্থ করতে হবে। বাঁচাতে হবে। আমাদের দেখলেই মানুষ ভয় পায়, রাস্তা দিয়ে হাঁটতেও দিচ্ছেনা। আত্মীয়-স্বজনসহ সব জায়গায় আমরাই যেন করোনা!’
আরেকজন স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘আনসার আটকে বলে আপনারা হাঁটতে পারবেন না। প্রোপার্টির সোসাইটির নাকি নিষেধ আছে।’
স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি এমন অসদাচারণের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে সরকার। সেই সাথে হাসপাতালগুলোতে করোনায় আক্রান্তদের সেবার দায়িত্ব পালনের দিনগুলোতে তাদের থাকারও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার আলাদা ব্যবস্থা করা হলেও রয়েছে খাবার না পাওয়ার অভিযোগ। একজন ডাক্তার হোটেলের বয়কে মেনু জানতে চাইলে জানতে পারেন, ডমি, ডাল ও সাদা ভাত।
এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, এখানে ভাত নষ্ট, একদম খাওয়া যায়না। ৪-৫ জনের ভাত দশজনে ভাগ করে খাইছি।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যে হোটেলে তারা থাকতেন সেখানে আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম ফাইভ স্টার মাণের যেন খাবার দেয়া হয়। একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যারা বাইরে থেকে খাবার সরবরাহ করতে চায় এখানে। আসলে তারা বাজার সৃষ্টি করেছে, ভয়ও দেখিয়েছে সেই হোটেল কর্তৃপক্ষকে। যখনই কানে এসেছে ব্যবস্থা নিয়েছি, এখন এই অবস্থার সুরাহা হয়েছে। রোগীদের পথ্যে জন্য প্রতিদিন সরকারি সরবনাহ ছিলো ১২৫ টাকা। সেই বরাদ্দ এখন ৩০০ টাকা করা হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের খাওয়ার জন্য জনপ্রতি ৪৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
হাসপাতালগুলোতে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করাতে আসা অনেকেই ভুল ঠিকানা দিচ্ছেন। তাই এ কাজে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (মেডিসিন বিভাগ) ডা. মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘যখন স্যাম্পল দেয় আমরা শুধু মোবাইল নাম্বার রাখি। পরবর্তীতে রেজাল্ট পজিটিভ আসলে আমরা তাদের ফোন করি। অনেকের ফোনই নট ইউজড আসছে। অনেকেরই ক্ষেত্রেই দেখা যায় ভুল নাম্বার দেয়া। কোভিড-১৯ যারা টেস্ট করতে আসবেন ন্যাশনাল আইডি কার্ডের একটা ফটোকপি বাধ্যতামূলক করা উচিত।’
হাসপাতালে তথ্য গোপন করে করোনা আক্রান্তরা চিকিৎসা নেয়ার কারণেই ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, ‘তারা বুঝতে পারছেনা, তথ্য গোপন করছে। এর ফলে, তারা যে ডাক্তারের কাছে সেবা নিতে যাচ্ছেন তারা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাহলে তথ্য গোপন করলে তারই তো ক্ষতি হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, রোগীদের সেবার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়েও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
Discussion about this post