ইকবাল হোসেন চৌধুরী :
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকল ধরনের চোরা চালানের পরিচিত নাম আবু জাফর ওরফে বিডি জাফর। দীর্ঘ ১৫-২০ বছর সিএন্ডএফ ব্যবসার অন্তরালে সরকারের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে নিয়ে গড়ে তুলেছে বিশাল সিন্ডিকেট। জাফর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের কয়েকটি পয়েন্টে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী ঘাটি। কে এই জাফর? গ্রামের বাড়ী ফরিদপুর।
বর্তমানে রাজধানীর উত্তরাতে বসবাস করে আসছে। উত্তরার বিএনএস টাওয়ারে মনোরঞ্জন অফিস নিয়ে চোরা চালান ব্যবসা করে আসছেন জাফর। একসময় কষ্ট করে চলা আবু জাফর বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক! বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন জাফর। আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জাফরের কয়েকটি শক্তিশালী চক্র আছে। যাদের সাথে জাফরের প্রতিনিয়তই যোগাযোগ হয়।
দুবাইয়ে অবস্থানকারী বাংলাদেশ সিন্ডিকেটের অন্যতম শফিউল আজম তালুকদার ওরফে মিন্টুর সাথে যোগসাজশ আছে তার। দুবাই ভিত্তিক সংঘবদ্ধ চোরা চালান চক্র লাগেজের আড়ালে স্বর্ণ, মোবাইল সেট ও বিভিন্ন ব্যান্ডের বিদেশী সিগারেট আবু জাফরের সাহায্যে অনায়াসে বিমানবন্দর থেকে বের করা হয়। বিমানবন্দর কাস্টম গোডাউনে জাফরের রয়েছে সংঘবদ্ধ চক্র।
যাদের মাধ্যমে গোডাউন থেকে বিভিন্ন ধরনের মালামাল চুরি করে আনে জাফর। কার্গো গুদামে বিমান, সিভিল এ্যাভিয়েশন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সহ তিন সংস্থার কিছু কর্মকর্তাকে আতাত করে মোবাইল সেট ও বিদেশী সিগারেট চুরি করে নিয়ে আসে জাফর। জাফর বিভিন্ন সময়ে অনেক লোকের কাছ থেকে জব্দকৃত মাল বের করার কথা বলে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, জাফর নিজের লাইসেন্স ব্যবহার না করে অসাধু কিছু কাস্টম কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ গুলো করে থাকেন।
করিম নামে এক ভুক্তভোগী জানায়, জাফরের সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরি হওয়ার সুবাদে জাফর জানান, লাগেজ করে স্বর্ণ, মোবাইল সেট, বিদেশী ব্যান্ডের সিগারেট আনলে খুব সহজেই বিমানবন্দর থেকে বের করে দিবেন তিনি।
পরবর্তীতে কোটি টাকার উপরে মোবাইল সেট, ল্যাপটপ ও বিদেশী সিগারেট দুবাই থেকে পাঠালে জাফর ব্যর্থ হলে শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা আটক করে তা জব্দ করে। কিছুদিন পর ২২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মালামাল গুলো বের করা যাবে বলে জাফর জানান। ২২ লক্ষ টাকার দেওয়ার পর আদোও ঐ পণ্য গুলো বের করা হয় নাই। এভাবেই মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছেন জাফর।
সিএন্ডএফ একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, জাফর অনেক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীর সাথেও নানা ভাবে প্রতারণা করেছে এবং কয়েকজন ব্যবসায়ী জাফরের কাছে টাকা পাবে। টাকা চাইতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। জাফর আওয়ামীলীগের কিছু অসাধু নেতাদের ছত্রছায়া ও সরকারের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে নিয়ে চোরা চালান বাণিজ্য করে আসছেন। কাস্টম নিলাম শাখায় তার নিজস্ব একাধিক লোক ব্যবহার করে মোবাইল সেট, ল্যাপটপ, বিদেশী সিগারেট সহ অনেক মালামালের নিলাম ভাগিয়ে নিয়ে আসে।
বিষয়টি নিয়ে জাফরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। এ ব্যাপারে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম কোন অভিযোগ পেলে আমরা সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী জাফরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। সরকারের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে দিনেরপর দিন এভাবে চোরা চালানের সাথে সম্পৃক্ত আছেন এই জাফর। জাফরের নানা অপকর্ম জানতে চোখ রাখুন- আগামী সংখ্যায়।
Discussion about this post