ঢাকায় হাসপাতালে চাকরি করেন এক নারী স্বাস্থ্যকর্মী। তিনি মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। কিন্তু বাড়ি আসার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে তাকে নির্জন জায়গায় একটি শুকনো পুকুরের মধ্যে তালপাতার ঝুপড়ি তৈরি করে কোয়ারেন্টাইনে রাখেন।
প্রায় ২ সপ্তাহ রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী ওখানে অবস্থান করছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লখন্ডা গ্রামে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসলে সমালোচনার ঝড় উঠে।
জানা গেছে, ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকরি করতেন। হাসপাতাল করোনার প্রাদুর্ভাবে তাকে ছুটি দিয়ে দেন। ছুটি পেয়ে বাড়িতে গেলে, তার বাড়ি আসার খবর পেয়ে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈর নির্দেশে এলাকাবাসী এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে তার বাড়ির প্রায় ৪০০ মিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে পুকুরের মধ্যে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখেন।
ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, আমার একমাত্র মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই। আমার মেয়ে আমার সংসার চালায়। ও ছাড়া কেউ উপার্জন করার মতো নেই। আর আমার মেয়ের এখনো বিয়ে হয়নি। তাকে কোয়ারেন্টাইনের নামে পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি বানিয়ে রাখা হয়েছে। আমার মেয়ের কিছু হলে এর দায় কে নিবে? প্রশান্তর নির্দেশে এ কাজ হয়েছে। আমি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এলাকাবাসীর সকলের সিদ্ধান্তে ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে এভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুশান্ত বৈদ্য বলেন, ওই স্বাস্থ্যকর্মী বাড়িতে আসার পরে আমাকে তার পরিবার বিষয়টি জানায়। আমি তাকে আলাদা ঘরে রাখতে বলেছিলাম। কিন্তু, ঐ স্বাস্থ্য কর্মিকে যে এরাকাবাসী পুকুরের মধ্যে একটি খুপড়ি ঘরে রেখেছে তা আমার জানা ছিলনা।
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান জানান, তারা ঐ স্বাস্থ্যকর্মীকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে দিয়ে এসেছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও ওসি জানান।
কেটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। এই স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী এভাবে না রেখে আমাদের জানালে তাকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে পারতাম। আমরা এই স্বাস্থ্যকর্মীকে ওখান থেকে এনে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করবো।
অপরদিকে, এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে যারা এভাবে ঝুপড়ি ঘরের ভিতর রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Discussion about this post