এমরান মাহমুদ প্রত্যয়, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর আত্রাইয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। চার স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আত্রাই নদীর পানি কিছুটা কমলেও গতকাল বৃহস্প্রতিবার বিপদসীমার প্রায় ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এদিকে বাঁধ ভেঙ্গে যাবার ফলে আত্রাই-সিংড়া এবং আত্রাই-বান্দাইখাড়া সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার পরিবারর লক্ষাধিক মানুষ। গত কয়েকদিন থেকে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া ও মধুগুড়নই গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এদিকে গতকাল বৃহস্প্রতিবার সকালে উপজলার আত্রাই- বান্দাইখাড়া পাকা সড়কের জাতআমরুল ও আহসানগঞ্জ সুইচগেটের উত্তর পার্শ্বে এবং আত্রাই- সিংড়া পাকা সড়কের বৈঠাখালী ও পাঁচুপুর ও মালিপুকুর নামক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে অসংখ্য গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। বাঁধ ভাঙ্গার ফলে সাহা গোলা ইউনিয়নের মিরাপুর,উদনপৈ,হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের বান্দাইখাড়া, নন্দনালী, কালিকাপুর ইউনিয়নের গন্ডগাহালী,শলিয়া, ধনেশ্বর, বাজেধনেশ্বর, গোয়ালবাড়ি, আহসানগঞ্জ ইউনিয়নর সিংসাড়া, দীঘা, দমদমা, ব্রজপুর, পাঁচুপুর ইউনিয়নের মধুগুড়নই, পাঁচুপুর,সাহেবগঞ্জ, বাঁকিওলমা, কাঁদওলমা,মালিপুকুর বিশা ইউনিয়নর বৈঠাখালী, পারমাহনঘোষ, বিশা, থৈলওলমাসহ শতাধিক গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবদী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি অনেক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে স্কুল ও উঁচু বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলার জগদাস গ্রামর রহিমা খাতুন বলেন, আমাদর গ্রামসহ পাশ্ববর্তী চকবিষ্টুপুরের প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়িতে পানি ডুকেছে। আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। এখন পর্যন্ত সরকারী কোন ত্রাণ আমরা পাইনি। ত্রাণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পিআইওকে বলেছি। উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামের পরান কুমার বলেন,একে তো করোনার আতংক এর পর এমন বন্যায় আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে তাই আমরা পাতাইলঝাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করছি।জানিনা এ মানবেতর জীবন আর কতো দিন বইতে হবে। উপজেলা দমদমা গ্রামের ভ্যানগাড়ি চালক,সাজেদুল ইসলাম বলেন,আমরা অসহায় গরীব মানুষ দিন খেটে দিন খায়”রোজগার বলতে একমাত্র ভ্যানগাড়ি,করোনা ভাইরাসে আমদের জীবন জীবিকা স্থবির হয়ে পরেছিল? এর উপর আবার বন্যা আমার একটি মাত্রা থাকার ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে আমি অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছি।লকডাউন আবস্থা থেকে আজ অবধি কোন ত্রাণ সামগ্রী পায়নি। জানি না কোন দিন সরকারি কিছু পাব কি না। উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নভেন্দু নারায়ন চৌধুরী বলেন, পানিবন্দী প্রায় ১ হাজার ৮০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ হিসাবে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। গতকালও পানিবন্দী মানুষের মাঝে ত্রাণ হিসাবে শুকনো খাবার চিড়া, মুড়ি, গুড়, খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে আত্রাই-সিংড়া এবং আত্রাই-বান্দাইখাড়া সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার লোকজন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে এসব রুটে চলাচলকারী সিএনজি, অটোচার্জার ও রিক্সা ভ্যান চলকেরা চরম বিপাকে পড়েছে। এ বিষয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম কাউছার হোসেন বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে উপজেলার কয়েক স্থানের বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ২ হাজার ৫৭ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষক অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সানাউল ইসলাম জানান, আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দী পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে এবং এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন যেসব স্থানের সড়কগুলো ঝুঁকিপূর্ণ তা রক্ষায় জোর চেষ্টা চলছে।
Discussion about this post